Press ESC to close

The Security Service (MI-5)

লেখকঃ Revan M

গতদিন উপনিবেশবাদী ও আগ্রাসী শক্তির দ্বারা পরিচালিত Rapid Action Battalion (RAB) নামক বাহিনীর কর্মকর্তা আলেপের (Additional Superintendent, Bangladesh Police) কুকর্ম নিয়ে আমি আরেকজন সম্মানিত লেখকের লেখা আমার Timeline হতে দিয়েছিলাম। যা মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তুলতে সমর্থ হয়।

কিন্তু, আমি অত্যন্ত শঙ্কার সাথে লক্ষ্য করছি যে, মানুষ নারকীয় ও পাশবিক নির্যাতনের বিষয়টির দায় পুরোপুরি আলোচ্য সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তা ও পতিত স্বৈরশাসক অথবা তার রাজনৈতিক দলের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। যেখানে বাস্তবতা চরম তিক্ত। আমাদের অধিকাংশের যে বাস্তবতা পছন্দ নাও হতে পারে।

বাংলাদেশে বিদেশি শক্তির নির্দেশে নিরপরাধ নাগরিকদের তুলে নেওয়া ও নির্যাতন করার কালচারটি আসলে ২০০০ সালের পর আওয়ামী লীগের হাতে পুনরায় আরম্ভ হয়নি। নিরপরাধ মানুষদের স্ত্রীদের তুলে আনা আর ধর্ষণের হুমকির বিষয়টিও ওরা শুরু করেনি। বিষয়টি যখন নতুন করে আরম্ভ হয়েছিল, তখন ঢাকার ক্ষমতায় Bangladesh Nationalist Party-BNPBangladesh Jamaat-e-Islami নিজেরাই ছিল। লণ্ডনের The Guardian পত্রিকার খুব পুরাতন একটি রিপোর্টের মাঝে যার বিবরণ খুব বিস্তারিত আকারে তুলে আনা হয়েছে।

লণ্ডনের সুপরিচিত পত্রিকার রিপোর্টটিতে তখন ‘০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের সিলেট শহরে ঘটে যাওয়া চরম নারকীয় ও পাশবিক জাতের বর্বরতার একটি বিবরণ চিত্রায়িত করা হয়। বৃটিশ সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী, সেদিন Rapid Action Battalion (RAB) জামিল রহমান নামের একজন নব-বিবাহিত ও নিরপরাধ বাংলাদেশি নাগরিককে দু’জন The Security Service (MI-5) অফিসারের উপস্থিতিতে তাদের তত্বাবধানে তার নব-বিবাহিতা জীবনসঙ্গিনীকে সহ তার শ্বশুরবাড়ি হতে তুলে নিয়ে আসে। অতঃপর তাঁদের Directorate General of Forces Intelligence (DGFI) এর Sylhet Detachment এর সদরদপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে তাঁকে DGFI এর Interrogator তাঁর স্ত্রীর থেকে আলাদা করে ফেলে ও তাঁকে নগ্ন করে প্রচণ্ড নির্যাতন করতে শুরু করে।

– তুমি আমাদের কথা মতো জবানবন্দি দিবে। নতুবা তোমার অর্ধাঙ্গিনী আমাদের কাছে আছে৷ আমরা তাঁকে ধর্ষণ করতে করতে মেরে ফেলব। তারপর ওর লাশ আগুনে পুড়িয়ে দিব আমরা! (DGFI হতে নিয়োজিত Interrogator নির্যাতিত হতে থাকা জামিলকে অবগত করলো)

অতঃপর DGFI কর্মকর্তা রূম হতে বেরিয়ে গেলে বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স হতে আগত দু’জন অপারেটিভ তাঁর কক্ষে আগমন করে। ওদিকে জামিল রহমান নিজেও বাংলাদেশের পাশাপাশি বৃটেনের নাগরিক ছিলেন। ফলে বৃটিশ গোয়েন্দারা তাঁর কাছে নিজেদের পরিচয় দিলে তিনি ওদের কাছে তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানান। ফলাফল হয় ভয়াবহ।

– ওরা দেখছি তোর ওপরে ভালো কাজ দেখাতে পারেনি! (বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স হতে আগত অপারেটিভ তাঁর উদ্দেশ্যে মন্তব্য করে)

অতঃপর ওরা রূম থেকে বেরিয়ে যায়। রূমে পুনরায় আগমন করে DGFI কর্মকর্তা। সে দীর্ঘক্ষণ যাবত জামিল রহমানের অণ্ডকোষে চাপ দিতে থাকে ও আরো বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করতে থাকে। পাশাপাশি চলতে থাকে তার চিরচেনা কুৎসিত হুমকিটি।

– তোমার স্ত্রী কিন্তু আমাদের হাতে! ওকে কিন্তু ধর্ষণ করব আমরা! (DGFI এর কর্মকর্তা হুমকি দিতে থাকে তাঁকে)

দীর্ঘক্ষণ ওভাবে চলার পর সে আবার বেরিয়ে গেলে MI-5 এর অপারেটিভরা কক্ষে ফিরে আস। ওদের একজন তখন শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁর বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে মন্তব্য করে – ভালো! এবার তোমার শিক্ষা হয়েছে!

সুতরাং, আমরা দেখলাম যে, আমাদের বাহিনীগুলোর মাঝে বর্তমানে দৃশ্যমান ভিনদেশীদের আদেশে নিজ নাগরিকদের ওপর Enforced Disappearance, Torture ও Murder পরিচালনার কালচার আচমকা শুরু হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিপরীতে সমস্যাটি সমগ্র রাষ্ট্রের কাঠামো ও পরিচালনার যে ব্যবস্থা, তার সাথে সম্পৃক্ত। যেখানে সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারি প্রশাসনের সমন্বিত অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে, বিষয়টি যে পর্যায়ে গিয়েছিল বিগত দশকে, তার জন্য আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব সম্পূর্ণ একক। আলোচ্য অংশটুকু লেখার সময়ে আমি সঠিক শব্দ বাছাইয়ের চেষ্টা করেছি, যেন গত ১৬ বছরে ঘটানো আওয়ামী লীগের অপরাধ অন্যদের কাঁধে গিয়ে পড়ে হালকা না হয়ে যায়। মূল উদ্দেশ্য হলো অন্যদের তত্বাবধানেও অনুরূপ ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা তুলে ধরা। ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে, আমি ‘২৪ সালের জুলাই গত হওয়ার পর আমাদের বাহিনী ও রাষ্ট্রের মাঝ থেকে সমস্যাগুলো সামান্য হলেও কিভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে কিছুটা ভাবনা ও পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছিলাম। তখন আমি দক্ষিণ কোরিয়ার স্বৈরশাসন পরবর্তী নিরাপত্তা বাহিনী পুনর্গঠন বিষয়ক কিছু গবেষণার সংস্পর্শে আসি।

আমি তখন তাদের একটি গবেষণাপত্রে পড়ছিলাম যে, কিভাবে জাপানি দখলদারিত্বের সময়ে গড়ে ওঠা উপনিবেশবাদী পুলিশ বাহিনী তাদের ভূখণ্ডকে শতবর্ষ যাবৎ ভুগিয়ে গিয়েছিল। জাপানিরা যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল, কিন্তু ওদের গড়ে যাওয়া পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কাঠামো দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘৪৫ সাল থেকে ‘৮৭ সাল পর্যন্ত শকুনের মতো খুবলে খেতে থাকে। আমাদের দেশের নাগরিকদের নির্যাতনের জন্য আজ যেমন জঙ্গিবাদ শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়, তেমনি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের বেলায় তখন কমিউনিজমকে ব্যবহার করতো দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্তারা। সামরিক শাসন চলাকালীন তাই দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকেরা নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে পরিবর্তনের দাবি তুলতে চরম ভয় পেতেন। কারণ, ওসব বিষয়ে সোচ্চার কন্ঠস্বরদের রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যেতো দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা Korean Central Intelligence Agency (KCIA)। আমেরিকার Central Intelligence Agency (CIA) ওসব সংস্থাকে তখন সরাসরি কমিউনিস্ট দমনে প্রশিক্ষণ, অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতো। আজকের জঙ্গি দমনের মতো করে তখন কমিউনিস্ট দমন করতো দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার National Police Agency (KNPA) আজ মানবাধিকারের বিষয়ে পৃথিবীর মাঝে অন্যতম অনুসরণীয়। তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আজ জনগণের অধিকারকে চরমভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এর চূড়ান্ত নমুনা আমি ০৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সাল তারিখে সিঊলের পার্লামেন্ট ভবনে দেখেছিলাম।

সেদিনের রাত ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য চরম বিপদের রাত। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি তখন জাতির সামনে দেওয়া তার ভাষণে আচমকা মার্শাল ল জারি করে বসেন। Republic of Korea Army Special Warfare Command কে সাথে সাথে সশস্ত্র বাহিনীর সদরদপ্তর থেকে পার্লামেন্ট ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্শাল ল কার্যকর করার জন্য আদেশ করা হয়। ওদিকে পার্লামেন্টে তখন বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকেরা মার্শাল ল তুলে নেওয়ার জন্য ভোটের আয়োজন শুরু করেছেন। আবার রাষ্ট্রপতির নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে সিউলের Capital Defence Command নিজেরাও তৎপরতা শুরু করে। ROKA Special Warfare Command হতে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে তখন সেখানে মোতায়েন হয় পৃথিবীর অন্যতম দক্ষ ও পেশাদার Direct Action Unit বলে পরিচিত 707th Special Mission Group। যাদের সহযোগিতার জন্য সেখানে আরো মোতায়েন হয় 1st Special Forces Brigade (Airborne) এর কমাণ্ডোরা।

আর এখান থেকে শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন সামরিক বাহিনীর আসল চেহারা প্রদর্শন। 707th Special Mission Group রাষ্ট্রপতি তথা তাদের Commander-in-Chief এর আদেশ মানতে বাধ্য। নয়তো তারা সামরিক আইনে বিদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত হবেন। সুতরাং, তারা পার্লামেন্ট ভবনে মোতায়েন তো হলেন। কিন্তু, তাদের অধিকাংশ নিজেদের অস্ত্রের সাথে নীল রঙা Blank Firing Adapter (BFA) লাগিয়ে হাজির হলেন। যা ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার জনতার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বার্তা। বার্তাটি ছিল, “আমরা তাজা গুলি বহন করছি না! আমরা মার্শাল ল এর পক্ষে থাকছি না! আমাদের পক্ষ হতে সাধারণ জনতা বা জনপ্রতিনিধিদের কোনো হুমকি নাই!” ওদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষের বড় অংশ তখন রাজপথে নামতে শুরু করেছে। রাজধানীতে কমাণ্ডো ও সামরিক ফর্মেশনের মোতায়েন হওয়া দেখে ‘৮০ এর দশকের সামরিক শাসনের স্মৃতি ফিরে পেতে শুরু করেছেন তারা। তারা পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হতে লাগলেন। 707, 1st Special Forces Brigade ও Capital Defence Command এর সদস্যরা তাদের কোনোরকম কার্যকরী বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন না। ফলাফল হিসাবে পার্লামেন্টের মাঝে জনপ্রতিনিধিদের ভোট সংঘটিত হলো ও রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে শেষ হয়ে গেলো। মার্শাল ল ভিত্তিহীন হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মাঝে ROKA Special Warfare Command এর কমাণ্ডো দল পরাজিত, কিন্তু জয়ী হয়ে পার্লামেন্ট এলাকা পরিত্যাগ করলো।

তাহলে নাটকীয় এই পরিবর্তনটি কিভাবে হলো! যারা কিনা একদা সরকারের আদেশে হাজারো লাশ ফেলতে পিছপা হয়নি, তারা কিভাবে সেদিন সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে অভিনব পদ্ধতিতে ফিল্ডে মোতায়েন হয়েও নিষ্ক্রিয় থাকার পথ বের করতে উদ্যত হলো! বিষয়টির রহস্য লুকিয়ে আছে সামরিক শাসন পরবর্তী দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ, নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর কাঠামোতে হওয়া পরিবর্তনের মাঝে।

দক্ষিণ কোরিয়ার চরম দূর্নীতিবাজ পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী ‘৯০ এর দশকের শুরু থেকে আগ্রাসী ধরণের পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে থাকে। আমাদের বাংলাদেশের সকল সংস্থা আর বাহিনী আজ দূর্নীতিতে পরিপূর্ণ। সরকারি কাঠামোর সর্বোচ্চ পর্যায় হতে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত চরম দূর্নীতি ছড়িয়ে আছে। অবস্থা আজ এমন হয়েছে যে, ঘুষের অর্থ না নিলে, নির্যাতন না করলে, অপরাধমূলক কাজে অংশ না নিলে আপনি আমাদের দেশের বাহিনী বা সংস্থায় থাকতে পারবেন না। আপনার পদোন্নতি মিলবে না। দক্ষিণ কোরিয়ার সকল বাহিনী ও সংস্থাতেও তখন এসব সমস্যা ছিল। সেখান থেকে ওসব দূর করার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল পূর্বেকার বাহিনীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সমস্ত Myth ভেঙে ফেলার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন চলাকালীন সামরিক শাসক নিজ গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীকে কমিউনিজম আর উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে প্রদর্শন করতো। যে ঢাল ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ওপর নিজ মসনদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, আমেরিকার স্বার্থ ধরে রাখার স্বার্থে সকল ধরনের দমন-পীড়ন বৈধ প্রমাণিত করতো সে। নতুন দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে আগে ওসমস্ত Myth ভাঙা হলো। সকল বাহিনী ও সংস্থার সত্যিকার চেহারা জনগণের সামনে তুলে ধরা হতে লাগলো। এতদিনের নায়কের বিপরীতে তখন খলনায়ক হিসাবে গল্প ও উপন্যাসের মাঝে দক্ষিণ কোরিয়ার সেকালের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্ণধারদের প্রদর্শন করতে লাগলেন সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা। ফলাফল হিসাবে দেশটির নতুন প্রজন্ম চরম সচেতন ও স্বাধীনচেতা হিসাবে বেড়ে উঠতে লাগলো। আর পরবর্তীতে সচেতন প্রজন্মটি গিয়ে হাল ধরলো নতুন সশস্ত্র বাহিনী আর গোয়েন্দা সংস্থার।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিবর্তন ঘটাতে আরেকটি বড় পদক্ষেপ যা তারা নিয়েছিল, তা ছিল কাঠামোগত পরিবর্তন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কাঠামোতে বিরাট পরিবর্তন আনা হয় তখন। বিভিন্ন বাহিনীর দূর্নীতিবাজ পদস্থ কর্মকর্তাদের চরম অপমান, অপদস্থ করে বাহিনী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাহিনীর মাঝে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ঘৃণিত হিসাবে গণ্য করার কালচার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুরাতন কর্মকর্তা ও সদস্যদের বড় অংশকে বহিষ্কার, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ও তদন্ত জাতীয় পদক্ষেপের মুখোমুখি করা হতে থাকে। বিপরীতে ওদের স্থানে বাহিনীতে নিয়ে আসা হয় সামরিক শাসকদের পতনে ভূমিকা রাখা নতুন প্রজন্মের তরুণদের। যাদের বাহিনীর মাঝে পরিবর্তন আনার বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায় হতে সহায়তার চেষ্টা করে সরকার।

কাঠামোগত পরিবর্তনের সময়ে আরেকটি বড় দিক ছিল পরিবর্তনের শৃঙ্খলা ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন Commission ও Task Force গঠন। যাদের দায়িত্ব হলো মানবাধিকার, দূর্নীতির মতো বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি চালিয়ে যাওয়া। অভ্যন্তরীণ পদোন্নতি, ভাতা, সুবিধার বিষয়েও যাদের ওপর বাহিনীগুলো নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

আমরা যদি দক্ষিণ কোরিয়ার Police Reform এর মডেল অনুসরণ করতে চাই, তাহলে আমার মতে বাংলাদেশে আমাদের সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা হলো Bangladesh National Police University প্রতিষ্ঠা করা। যার মাধ্যমে আমরা Bangladesh Civil Service (BCS) নামক উপনিবেশবাদী পুলিশের সংস্কৃতি হতে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাব। দ্বিতীয়ত আমাদের Anti-Corruption Commission – BangladeshNational Human Rights Commission, Bangladesh কে শক্তিশালী করতে হবে। যার কোনো লক্ষণ বর্তমানে দৃশ্যমান হচ্ছে না।

অন্যদিকে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী আর গোয়েন্দা সংস্থা হতে বিশ্বাসঘাতক নির্মূল করা বর্তমান বাংলাদেশের কারো পক্ষে সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় সম্পর্কে আমি পূর্বে বেশ কয়েকবার লেখা-লেখি করেছি। সংক্ষিপ্তাকারে যদি বলি, আমাদের তুরস্কের সাথে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থার বিষয়ে তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

আমাদের বাহিনী ও সংস্থাগুলোর দূর্নীতিমুক্ত থাকার সাথে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বাহিনীগুলোর মাঝে চরম পরিবর্তন সংঘটন ও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত না করা হলে তারা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অভিভাবক নয়, বরং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার মূল হুমকি হয়ে যেতে পারে। আমরা যার কিছু নমুনা কয়েকদিন যাবৎ দেখে চলছি। বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে হলে আগে আমাদের ভূখণ্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বশীলদের রক্ষা করতে হবে। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দূর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তি জাতির জন্য হুমকি। শত্রুর গুপ্তচর ওদের সন্ধান করে নিজেদের পক্ষের বিশ্বাসঘাতকে রূপান্তর করবার জন্য। দূর্নীতিবাজ মাত্রই শত্রুর গুপ্তচর। আর গুম, নির্যাতন সবচেয়ে বড় কিছু দুর্নীতির অন্তর্গত। শত্রুর গুপ্তচর যার প্রমাণ সংগ্রহ করার মাধ্যমে জড়িতদের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হতে পারে। আমার ধারণায় যা আমাদের ভূখণ্ডেও ঘটেছে।

তবে, বর্তমানেও আমরা বিষয়টি নির্মূলের জন্য কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। স্বীকৃত বিশ্বাসঘাতক ও রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য পরিচিত অনেক ব্যক্তিত্ব ও ফর্মেশন আজও পূর্ণ শক্তির সাথে তৎপর রয়েছে। আমরাই যাদের চালু রেখেছি। যেখানে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত ছিল না যে, গত ‘২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে ঠিক আছে, তার মানে মানুষ ভালো হয়ে যায়নি। আর ভালো হলেও তা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের জনতার ও সরকারের দায়িত্ব অপরাধীদের শাস্তির আওতাধীন করা। যা করা হয়নি। আর, পরিণামে আজ আমরা জাতি ও দেশ হিসাবে নিরাপত্তা হুমকিতে পতিত হয়েছি।

ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *