গাজীপুর মহানগরের চতর এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসা ইবনে মাসউদের প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হোসেন (আল-আমিন) দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছিলেন। হঠাৎ করেই, তার মাদ্রাসা থেকে ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে তুলে নেয়। তারা নিজেদের পরিচয় ডিবি বলে দিলেও, মূলত তারা ছিল CTTC-এর সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্য। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে তুলে নেয় CTTC-এর বিশেষায়িত টিম।
পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখালেও, মাওলানা আবুল হোসেনের কোনো খোঁজ মেলেনি। স্বৈরাচারী হাসিনা পালানোর পরেও মাওলানা আবুল হোসেনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মাওলানা আবুল হোসেনের কী হয়েছিল বলার আগে, আমার গুমের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। গুমের সময় মাঝেমধ্যে আমাদের হাত-পায়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হতো। তখন তারা নিজেদের মধ্যে নানা গল্প করত। কথায় কথায় একদিন একজন বলে উঠল— “আঞ্জুমান মফিদুল না থাকলে লাশ নিয়ে আমাদের কত ঝামেলায় পড়তে হতো!”
মূলত তারা ক্রসফায়ার কিংবা নির্যাতন করে হত্যা করার পর লাশগুলো আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে গায়েব করে ফেলত।
এবার ফিরি মাওলানা আবুল হোসেনের কথায়। মাওলানা আবুল হোসেন এবং তার সাথে যারা গুম হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাত এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ। ঝুলিয়ে রড দিয়ে পেটানো হতো। আমরা জেলে দেখেছি—একজন ভাইয়ের পায়ে এত বেশি নির্যাতন করা হয়েছিল যে, তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে পারতেন না। মাওলানা আবুল হোসেনও এই নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি স্ট্রোক করেন।
গুমে থাকা একাধিক ব্যক্তির বর্ণনা মতে, একদিন তারা গার্ডদের বলতে শুনেছিলেন—”ইশতিয়াক স্যারের হাতে একজন মারা গেছে।” পরে জেলে এসে নিশ্চিত হন যে, তিনি গাজীপুরের মাওলানা আবুল হোসেন।
মাওলানা আবুল হোসেনের লাশ তারা আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে গায়েব করে ফেলে। এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ এখন জেলে আছেন; জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি করে হত্যা করার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। আমরা আশা করব, শুধু জুলাই-আগস্টের গণহত্যা নয়, মাওলানা আবুল হোসেনসহ যাদেরকে সে হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক। অন্তত মাওলানা আবুল হোসেনের পরিবার যেন তার লাশের ঠিকানা জানতে পারে।
Leave a Reply