Press ESC to close

মুকুল রানা

১৮ জুন ২০১৬,

খিলগাঁও ফ্লাইওভারের চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় “শরিফুল” নামের এক ব্যক্তি। পুলিশের ভাষ্যমতে, শরিফুলসহ আরও দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরিফুল নিহত হয়। তার শরীরে ১০টি ছিদ্র পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, শরিফুলের শরীরে ১০টি গুলি লাগলেও বাকি দুইজন মোটরসাইকেল আরোহীকে পুলিশ ধরতে পারেনি। পরবর্তীতে পুলিশ জানায়, শরিফুলের আসল নাম মুকুল রানা। সে নাকি এক দুর্ধর্ষ জঙ্গি।

এই মুকুল রানার নাম প্রথমবার শুনে ধাক্কা খাই, যখন গুমে ছিলাম। CTTC আর্মস টিমের এডিসি আহমেদ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি মুকুল রানাকে চিনি কিনা। আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। পরে সে বলল, বন্দুকযুদ্ধের নিউজ দেখিস নাই? বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর অবস্থা ওর মতো হবে। আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে তোকেও এইভাবে ফেলে রাখব।

এই ধরনের ভয়ভীতি তারা প্রায়ই দেখাত। একদিন কনস্টেবলরা শুনিয়ে শুনিয়ে বলল—মেসবাহ নাকি কাউকে ক্রসফায়ার দেওয়ার পর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে পা দিয়ে মাড়াত; খিলগাঁওয়ের ঘটনায় মেসবাহ স্যার এই কাজ করেছেন।

বেরিয়ে এসে মুকুল রানার নিউজগুলো নিয়ে খোঁজখবর করলাম। সাতক্ষীরার বাসিন্দা মুকুল রানা। পরিবারের ভাষ্যমতে, ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি বিয়ে করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি বউভাতের পর মুকুল রানা ও তার স্ত্রী যশোরের বসুন্দিয়ার জগন্নাথপুরে তার শ্বশুরবাড়ি যান।

২৩ ফেব্রুয়ারি তারা ভ্যানে করে শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। বসুন্দিয়া বাজারে আসলে , ১০-১২ জন লোক মুকুল রানাকে তুলে নিয়ে যায়। মুকুল রানার স্ত্রী মহুয়া আক্তারের ভাষ্য মতে ,

‘বসুন্দিয়া মোড়ে পৌঁছালে ১০-১২ জন হঠাৎ করে আমাদের রিকশাভ্যানের সামনে এসে মুকুলকে জাপটে ধরে। এ সময় আমি দৌড়ে পাশের দোকান থেকে বাড়িতে ফোন করি।’

ভ্যানচালক জাহিদও প্রথম আলোকে বলেন,

‘বসুন্দিয়া মোড়ে পৌঁছালে কয়েকজন লোক মুকুলকে ধরে দুই হাতে হাতকড়া পরায়। কোনো কথা বলার আগেই তারা মুকুলকে মাইক্রোবাসে তুলে দ্রুত চলে যায়।’

ওই ঘটনার দুদিন পর, ২৫ ফেব্রুয়ারি মুকুল রানার শ্যালক আমির হোসেন যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

শুধু তাই নয়, ঢাকায় মুকুল রানাকে খুঁজতে আসলে তার স্ত্রীর বড় ভাই মুজিবুর রহমানকেও জঙ্গি বানায় CTTC ।

দীর্ঘ ৪ মাস গুম রাখার পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় মুকুল রানা ওরফে শরিফুলকে।

আরও একটি শকিং তথ্য দিই—মুকুল রানার শরীরে যে ১০টি ছিদ্রের কথা বলা হয়েছিল, তা মোটেও গুলির ছিদ্র ছিল না। বরং তাকে ড্রিল মেশিন দিয়ে ড্রিল করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর সাজানো হয় এই জঙ্গি নাটক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *