হাসিনা ও আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে বানিয়েছিল গুম, খুনের এক সাইকো বাহিনী। আর এই সাইকো বাহিনীর সদস্যরা হাসিনাকে খুশি করার জন্য আরও একধাপ এগিয়ে কাজ করত। হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য গুম, খুনের মাধ্যমে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল।
হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম বড় ভূমিকা যে বাহিনীর, সেটা হচ্ছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এই গুমি বাহিনী হাসিনার জঙ্গি ন্যারেটিভ বজায় রাখতে একের পর এক জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করতে শুরু করে। নিজেদের ইচ্ছেমতো গুম, টর্চার এবং কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজাতে থাকে এই সিটিটিসি।
আজকে হাসিনার এই ভাড়াটে সাইকো বাহিনীর এমন একজন সদস্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, যার বর্বরতা, অত্যাচার র্যাবের আলেপের চাইতেও কম না।

এডিসি মোঃ আহমেদুল ইসলাম
২৯তম বিসিএস-এর এই সাইকোপ্যাথ নিজেকে ছাত্রলীগ ক্যাডার বলে পরিচয় দিত। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের তুলে নেওয়ার আলোচনায় আসলেও, এই গুম-নির্যাতনের ইতিহাস অনেক পুরনো।
চরম ইসলামবিদ্বেষী এই আহমেদুল শুধু পুরুষ না, নারী ও শিশুদেরও গুম করত। আহমেদের ভাষ্যমতে সে একটি পরিবারকে নারী-শিশুসহ ৮ মাস গুম করে রাখে। কাউকে টর্চার করার সময় ভয় দেখানোর জন্য এসব বলত। বেশ গর্বভরে সে অত্যাচারের বর্ণনা দিত। রমজানেও তাকে দেখেছি মুখে সিগারেট নিয়ে ভিক্টিমদের টর্চার করতে।
**তার টর্চারের কিছু বর্ণনা:**
১. সে প্লাস দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ দিয়ে চামড়া টানত।
২. হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলত।
৩. তার ফেবারিট একটা মেথড ছিল – হাফ উলঙ্গ অবস্থায় হাত-পায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফ্লোরে ফেলে রাখা, এবং কনস্টেবলদের নির্দেশ দেওয়া – কিছুক্ষণ পরপর লাথি মারতে।
৪. চেয়ারে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে যতক্ষণ না হয়রান হতো, ততক্ষণ মোটা লাঠি দিয়ে পেটানো।
৫. ইন্টারোগেশনের আগে সিগারেট ধরিয়ে নিত। নিজের পছন্দমতো উত্তর না পেলে ছ্যাঁকা দিতো।
৬. ঝুলিয়ে পেটাত।
৭. গোপনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দিত।
৮. ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি আদায় করত — মাথায় লোডেড বন্দুক ঠেকিয়ে।
আহমেদ কাউকে গুম করলে ২/৩ মাসের আগে তাকে কখনওই ছাড়ত না। এমনো ভিক্টিম আমরা পেয়েছি, যাদের দুই বছরেরও বেশি সময় গুম করে রাখা হয়েছিল।
সিটিটিসির কসাই আহমেদুল ইসলামের হাতে গুমের তালিকা
আমাদের হাতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই, তবে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আহমেদুল ইসলাম ও তার টিম অন্তত ২০ জনেরও বেশি মানুষকে গুম করেছে।
## গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা (২০২০–২০২২)
1. বাকি বিল্লাহ – ১২ নভেম্বর ২০২০ – আনুমানিক ৪ মাস
2. ফয়সাল ইবনে মোস্তফা – সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০২০ – আনুমানিক ১ মাস
3. সাব্বির আহমেদ – সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০২০ – আনুমানিক ৩ মাস
4. আরিফুল ইসলাম – ডিসেম্বর ২০২০ – আনুমানিক ৪ মাস
5. সাইয়েদ তাইমিয়া ইব্রাহিম – ২০২০ সালের শেষের দিকে – আনুমানিক ৬ মাস
6. সাজিদুল ইসলাম – ২০ ডিসেম্বর ২০২১ – আনুমানিক ৭ মাস
7. রাফিউযযামান – ২০২১ সালের দিকে – আনুমানিক ২ বছর
8. ইহছানুর রাহমান এপ্রিল ২০২২, ১৮ মাস।
9. সাজ্জাদুর রহমান শাওন – ১০ এপ্রিল ২০২২ – সাড়ে তিন মাস
10. ইফাজ আহমেদ চৌধুরী – ১১ এপ্রিল ২০২২ – সাড়ে তিন মাস
11. সাইফুল ইসলাম – সেপ্টেম্বর ২০২২ – সময় অজানা
12. কারী দেলোয়াল হোসেন – সেপ্টেম্বর ২০২২ – সময় অজানা
13. ডা. মির্জা কাউসার – সেপ্টেম্বর ২০২২ – ৫ দিন (নিউজ প্রকাশ হলে গ্রেপ্তার দেখায়)
14. মামুন – নভেম্বর ২০২২ – সময় অজানা
15. ডা. জাকির – ৮ নভেম্বর ২০২২ – ৭ দিন
16. মীর সজীব – ডিসেম্বর ২০২২ – আনুমানিক ১৫ দিন
17. ওমর ফারুক – ডিসেম্বর ২০২২ – আনুমানিক ১৫ দিন
18. হানিফ বিন সোহরাব – ডিসেম্বর ২০২২ – আনুমানিক ১৫ দিন
19. এবি এম মহসিন – সময় অজানা
20. জুলফিকার – সময় অজানা
21. কাউসার সাদি – ২১ মে ২০২৩ – আনুমানিক ৪ মাস
23. সাখাওয়াতুল কবির নভেম্বর ২০২২, ১১ মাস।
24. বখতিয়ার নাজমুল জুন ২০২৩, ৩ মাস।
২৫- আবু নাইম মুহাম্মদ জাকারিয়া ২০১৬ সাল, ৮ দিন।
গুম কমিশনের প্রতিবেদনে সরাসরি উল্লেখ আছে – আহমেদুল ইসলাম গুমে জড়িত। ফলে তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তাকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, বরং নিজ জেলার রংপুরে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে — যা সরকারি চাকরি বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তার গুম স্কোয়াডের সদস্য ওবাইনকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
গুম, খুনের বিচার ছাড়া এই গণবিপ্লব কখনোই সফল হবেনা।
আমরা চাই সিটিটিসির কসাই আহমেদুল ইসলাম ও তার টিমকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
Leave a Reply